স্বদেশ ডেস্ক:
বয়সে কিশোর হলেও চুলের স্টাইল কিংবা অভিব্যক্তি সবই আক্রমণাত্মক। ‘স্টার বন্ড’ নামে গ্যাং তৈরি করে তারা এরই মধ্যে জড়িয়ে পড়েছিল এলাকায় প্রভাব বিস্তার, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও মাদক কারবারের মতো বড় অপরাধে। কখনো কখনো সামান্য ঘটনায় প্রতিপক্ষের সঙ্গে খুনোখুনি তাদের কাছে তুচ্ছ ব্যাপার।
গত শনিবার মধ্যরাতে রাজধানীর রায়েরবাজারের বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এলাকায় অভিযান চালিয়ে এ ‘স্টার বন্ড’ গ্যাংয়ের ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। পরে তাদের প্রত্যেককে এক বছর করে কারাদ- দেন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে অধিকাংশেরই বয়স ১৬ থেকে ১৭ বছর।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান এলাকা ঘিরে গড়ে ওঠা এ কিশোর অপরাধী গ্রুপটির এক সদস্য গত বছর প্রতিপক্ষ আরেক গ্রুপের হাতে খুন হয়। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই গত শুক্রবার সশস্ত্র অবস্থায় রায়েরবাজার এলাকায় মহড়া দিচ্ছিল তারা। এ সময় সাদা পোশাকে র্যাবের দুই সদস্য তাদের বাধা দিতে চাইলে তাদেরও অস্ত্র হাতে ধাওয়া দেয় ওই কিশোররা। এর পরই অভিযানে নামে র্যাব-২।
র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, রায়েরবাজার এলাকায় যত ছিনতাই বা মাদক ব্যবসা হয়, এর সঙ্গে এ কিশোর গ্যাং জড়িত। এ গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ছিনতাই ও মাদক নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। তবে কথিত ‘স্টার বন্ড’ গ্রুপের প্রধান সানাকে এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি। এ ছাড়া এখনো অধরা রয়ে গেছে ‘স্টার বন্ড’ গ্রুপের প্রতিপক্ষ ‘মোল্লা রাব্বি গ্রুপ’।
সারওয়ার আলম বলেন, গত এক বছর আগে ‘মোল্লা রাব্বি’ নামে কিশোর গ্রুপের হামলায় ‘স্টার বন্ড’ গ্রুপের এক সদস্য নিহত হয়। গত শুক্রবার ছিল ওই কিশোরের মৃত্যুবার্ষিকী। এ উপলক্ষে ‘স্টার বন্ড’ গ্রুপ মসজিদে মিলাদের আয়োজন করে। মিলাদের ছবি ‘স্টার বন্ড’ গ্রুপ তাদের ফেসবুক পেজে পোস্ট করার পর ‘মোল্লা রাব্বি’ গ্রুপের সদস্যরা তাতে অবজ্ঞা সূচক রিয়েকশন দেয়। তা দেখেই স্টার বন্ড গ্রুপের সদস্যরা চাপাতি, হাঁসুয়া, ছুরি নিয়ে মোল্লা রাব্বি গ্রুপের ওপর হামলার উদ্দেশ্যে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান এলাকায় সমবেত হয়। ওইদিন জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রার নিরাপত্তা টহলে নিয়োজিত ছিল র্যাব-২ ব্যাটালিয়নের কয়েকটি দল। ওই কিশোরদের সশস্ত্র অবস্থান দেখে সাদা পোশাকে র্যাবের দুই সদস্য তাদের কারণ জিজ্ঞাসা করেন। কিন্তু কিশোররা সেই র্যাব সদস্যদেরও ধাওয়া করে। ভাগ্যক্রমে র্যাবের ওই দুই সদস্য সেখান থেকে নিরাপদে ফিরে আসেন। এর পর শনিবার দিনভর স্টার বন্ড গ্রুপের সদস্যদের ধরতে অভিযান শুরু হয়। অভিযানে মোহাম্মদপুর এলাকার তিন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করা হয় কিশোর গ্রুপের ১৭ সদস্যকে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, গ্রেপ্তারকৃত প্রত্যেক কিশোরই মাদক সেবন, বিক্রি ও ছিনতাইয়ে জড়িত। এ ছাড়া দুই কিশোর গ্রুপের দ্বন্দ্বের কারণে এলাকায় অরাজকতা ও নিরাপত্তাহীনতা বিরাজ করত। গ্রেপ্তারকৃতের প্রত্যেকে অপরাধে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করায় তাদের এক বছর করে কারাদ- দিয়ে টঙ্গীর কিশোর সংশোধনকেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। মোল্লা রাব্বি গ্রুপের সদস্যদেরও গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।